নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থানার চাঞ্চল্যকর রাজীব হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন এবং মূলহোতাসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন -পিবিআই।
মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) পিবিআই জানায়, এ ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে ৮ জন। তারা হলো, দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিলু (৩৭), মিজানুর রহমান (২৫), মো. মাহবুব (২১), আবুল হোসেন (৩০), আনোয়ার হোসেন (৩৫), মো. যতন মিয়া (৪২), শুক্কুর (৩৫), এবং সিরাজুল ইসলাম। এদের মধ্যে দিলুকে ঢাকা থেকে এবং মাহবুব ও যতনকে হাটনাইয়া মোহনগঞ্জ থেকে এবং সিরাজুলকে তারাকান্দা থানা এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত বছরের ৭মে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শেখ ইসলাম এর ভাটিয়া মোহনগঞ্জে অবস্থিত পুকুর থেকে রেজাউল করিম রাজীবের (২২) লাশ উদ্ধার করে মোহনগঞ্জ থানা পুলিশ। এ ব্যাপারে ওই মাসের ৯ তারিখ রাজীবের বাবা মো. বাচ্চু মিয়া মোহনগঞ্জ থানায় সন্দেহজনক ১২ জনকে হত্যা মামলা আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি প্রথমে মোহনগঞ্জ থানা পুলিশ তদন্ত করে এবং পরবর্তীতে পিবিআই এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলাটির দায়িত্ব দেয়া হয় তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক জনাব মোহাম্মদ জাকির হোসেনের কাছে।
তদন্তে নিহত রাজীবের মৃতদেহের গলায় প্যাঁচানো শার্ট এর মালিককে সনাক্ত করে যতন মিয়া নামে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিলু এবং অপর পাঁচ জন শেখ ইসলামের ফিসারিজে রাজীবকে হত্যা করে। যতন মিয়া গত মাসের ২৩ তারিখ আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দির দেয়। তার জবানবন্দীর সূত্র ধরে দিলুকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
দিলু হত্যা এবং অস্ত্র মামলাসহ ৩টি মামলার এজাহার ভুক্ত আসামি। ঘটনার দিন দিলু ঢাকা থেকে তার গ্রামের বাড়ি মোহনগঞ্জে গেলে তার এলাকার মাদক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান, মাহবুব ও আবুল হোসেন দিলুকে জানায়, ভাড়া মোটর সাইকেল চালক রাজীব তার ইয়াবার ব্যবসার জন্য মোটর সাইকেল ভাড়া যেতে রাজী নয়। এজন্য মিজানুর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে রাজীবকে হত্যার কথা জানায়। এ জন্য দিলু সাড়ে চার হাজার টাকার বিনিময়ে রাজীবকে হত্যা করতে রাজী হয়।
একইদিন আসামিদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আনোয়ার ও শুক্কুর নিহত রাজীবের মোটর সাইকেল দুইশত টাকায় ভাড়া করে হত্যার উদ্দেশ্যে মোহনগঞ্জের ভাটিয়া এলাকায় জনৈক শেখ ইসলামের ফিসারিজে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা দিলু, মিজানুর, মাহবুব ও আবুল হোসেনসহ আনোয়ার ও শুক্কুর এলোপাথাড়ি মারতে থাকে রাজীবকে। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা জায়গা ত্যাগ করে এবং রাজীবের মোটর সাইকেলটি মনোবীর নামের এক ব্যক্তি দোকানের পেছনে ফেলে রেখে চলে যায়।
তাদের সহযোগী যতন মিয়া ও তার সহযোগী পাহারাদার সিরাজুল লাশ গুম করার জন্য লাশের শরীরে সিমেন্টের জমাট বাঁধা পাথর বেঁধে উক্ত পুকুরে ফেলে দেয়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহীনুর কবির বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর এবং ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড ছিল। প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে এবং পিবিআই এর অত্যাধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামিদের সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে এবং তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিরা আদালতে ঘটনায় সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে।